Tuesday, August 5, 2008

যেন ভুলে না যাই ...কমিউনিস্ট পার্টি গঠন.Kurigram Communists

অমরেন্দ্র প্রসাদ লাহিড়ী ওরফে কালা লাহিড়ী তাঁর দিনলিপিতে লিখছেনঃ-"১৯৩৮ সনে ৫৭বৎসর বয়সে পিতার মৃত্যুর পর যে যাহার মত চলিতে শুরু করিলাম।আমি পুনরায় কুড়িগ্রামে গেলাম এবং পূর্বতন বৈপ্লবীক সমিতির "দাদাদের" সহিত মিলিত হইলাম। ঐ সময়ে তাঁহারা সাম্যবাদী বধারায় আকৃষ্ট।আমরাও প্রায় অন্ধভাবে প্রথমে তাঁহাদের অনুসরণ করিতাম।পরে অধ্যয়নের মধ্য দিয়া আমরাও সাম্যবাদী ভাবধারায় উদ্বুদ্ধ হইলাম। প্রকাশ্যে
আমরা কংগ্রেস সংগঠনের মধ্য দিয়া গ্রামাঞ্চলে আমাদের রাজনৈতিক কাজকর্ম করিতেছিলাম। ১৯৩৯ সনে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়। উহার কিছুদিন পূর্বে বা পরে আমরা কমিউনিস্ট পার্টির সভ্যপদ পাই।কুড়িগ্রাম মহকুমায় আমরা নিম্নলিখিত মাত্র ৫ জন সভ্যপদ প্রাপ্ত হইলাম।১।সুধীর মুখোপাধ্যায় ২।মনীশ রায় ৩।রবি লাহিড়ী ৪।মনোরঞ্জন গুহ এবং ৫। আমি ।"
কুড়িগ্রামের এই "দাদা"দের পরিচয় দিনলিপিতে বিশেষ ভাবে উল্লেখ করা নেই।তবে,পারিপার্শিক সাক্ষে অনুমান করা যেতে পারে, সুধীর পাধ্যায় এবং মনীশ রায় অন্যতম দুই 'দাদা'।সেই সময়ে কুড়িগ্রাম মহকুমা সহ সদরের কালীগঞ্জ থানা নিয়ে কমিউনিস্ট পার্টির লোকাল কমিটি ছিল।সুধীর মুখোপাধ্যায় লিখছেন:"....-১৯৩৭ সালের শেষভাগে আন্দামান প্রত্যাগত পার্টিনেতা দেবকুমার দাস প্রাদেশিক কমিটির নিকট থেকে একটি নির্দেশমূলক চিঠি নিয়ে আসেন।তদনুসারে অবনী বাগচী ,শচীন ঘোষ,শিবদাস লাহিড়ী বিনয় বাগচী ও সুরেশ রায়চৌধুরীকে প্রার্থী সভ্যপদ দিয়ে একটি অস্থায়ী জেলা কমিউনিস্ট পার্টি গঠিত হয়।১৯৩৮ সালে জেলা সাংগঠনিক কমিটি গঠিত হয়।...." সরোজ মুখোপাধ্যায় ও তাঁর " ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি ও আমরা"(ন্যাশনাল বুক এজেন্সি প্রাইভেট লি,১২-বঙ্কিম র্জি স্ট্রিট,কলকাতা-৭০০০৭৩) গ্রন্থে রঙ্গপুর জেলায় কমিউনিস্ট পার্টির সংগঠনের প্রাতিষ্ঠানিক সৃষ্টি সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে লিখেছেন " কুড়িগ্রামে পার্টি গড়ে ওঠে সুধীর মুখারজিকে কেন্দ্র করে।
দেখা যাচ্ছে বিপ্লবীদের একাংশ দেশকে ব্রিটীশ শাসন থেকে মুক্ত করার জন্য ক্রমশঃ শ্রমিক-কৃষকের মিলিত সংগ্রামের লক্ষে কমিউনিস্ট পার্টির পতাকা তলে সংঠিত হচ্ছেন। একই সাথে তাঁরা কংগ্রেস সংগঠন পুনরুজ্জীবিত করতে ব্রতী হন। সারা ভারত কংগ্রেসের লক্ষ্ণৌ অধিবেশনে গৃহীত গণসংযোগ কার্যক্রম এবং স্বতন্ত্র কৃষক সংগঠনের কাজ সমন্বয় করে কার্যক্রম পরিচালনা করা হোত।প্রায় সব কর্মীই কংগ্রেসের জেলা,মহকুমা,বা স্থানীয়
নেতৃত্বের পদে প্রতিষ্ঠিত ছিলেন । সুধীর মুখার্জী এক সময়ে কমিউনিস্ট পার্টির জেলা সম্পাদক পরে হন।'কিছুদিন পরে তিনি প্রাদেশিক সংগঠক হলে মণিকৃষ্ণ সেন জেলা সম্পাদক হন।এক সময়ে দেখা যায় একই ব্যক্তি একাধারে কংগ্রেসের জেলা সম্পাদক আবার একই সাথে তিনি কমিউনিস্ট পার্টিরও জেলা সম্পাদক।উদাহরণ হিসাবে মণিকৃষ্ণ সেন -এর নাম উল্লেখ করা যেতে পারে।তিনি একটা পর্বে রঙ্গপুর জেলা কংগ্রেসের সম্পাদক ছিলেন, আবার, একই সাথে কমিউনিস্ট পার্টিরও সম্পাদক ছিলেন।এই প্রসঙ্গে এটা স্মরণে রাখতে হবে যে, কমিউনিস্ট পার্টি তখন নিষিদ্ধ ছিল এবং সেই পার্টি গোপনে করতে হতো।গোপনে কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকায় প্লবীদের পক্ষে কমিউনিস্ট পার্টি করা সহজতর হতো-এই অনুমান করা অযৌক্তিক নয় বলে মনে হয়।
প্রকাশ্য ও গোপন কাজের সমন্বয় ও সংগঠন আলোচনা করার প্রসঙ্গে সুধীর মুখার্জী লিখছেন:-"পার্টির বে-আইনী ও গোপন যুগের গণ-আন্দোলন ও তার সাফল্য নির্ভর করে প্রকাশ্য ও গোপন,আইনী ও বে-আইনী কাজের সমন্বয়ের উপর। এ বিষয়ে জেলা স্তর থেকে লোকাল ও
সেল স্তর পর্যন্ত সচেতন প্রচেষ্টা ছিল।সে সময় জেলা পার্টির অন্যতম নেতা মণিকৃষ্ণ সেন, জেলা কৃষক সমিতির নেতা দীনেশ লাহিড়ী,পার্টি উকিল মণি মজুমদার, পার্টি নেতা বিভূতি লাহিড়ী(ভাদু লাহিড়ী)ছাত্র নেতা বিজলী লাহিড়ী,গোপাল সেন প্রভৃতি গোপন কাজের সাথে সু-সংহত ভাবে পার্টি নেতৃত্বে প্রকাশ্য কাজ পরিচালনা করতেন।নীলফামারীতে বিমল ভৌমিক,ক্ষিতিশ দাস,বলরাম সাহা,গোপাল আজিজ। কুড়িগ্রামের রবি লাহিড়ী,কালা লাহিড়ী,বদরগঞ্জের শঙ্কর রায়,বিজয় রায়,গাইবান্ধার নির্মল বর্মন,পানু পাল,গণেশ ধর,ভূপেশ রায়, ছাত্র কর্মী চিনু প্রভৃতি দায়িত্ব পালন করতেন।লালমণির হাটে ডাঃসূর্য কান্ত বিশ্বাস,ডাঃ সিতাংশু সেন দায়িত্বে ছিলেন।

No comments: