Thursday, July 31, 2008

কুড়িগ্রাম কথা বিপ্লবী প্রেক্ষাপট Kurigram-Revolutionary Tradition

12:41 AM 7/31/2008ইতিপুর্বে কুড়িগ্রামে যুগান্তর ও অনুশীলন সমিতির উপস্থিতির কথা উল্লখ করেছি।দেশকে স্বাধীন করা উভয়ের লক্ষ্য হলেও এই দুই গোষ্ঠির পারস্পরিক সম্পর্ক নিয়ন্ত্রিত হত তাদের প্রাদেশিক নেতৃত্ত্বের মর্জিমাফিক,তৃণমূল স্তরের কর্মীদের মতামত, আশা-আকাংখা উপেক্ষা করেই। এই প্রসঙ্গে অবনী লাহিড়ীর "তিরিশ চল্লিশের বাংলাঃ রাজনীতি ও আন্দোলনের অভিজ্ঞতা প্রসঙ্গে"(সাক্ষাৎকার ও সম্পাদনা রণজিৎ দাশগুপ্ত, প্রকাশক-সেরিবান) বইটি থেকে একটি ঘটনা উদ্ধৃত করা যেতে পারে-অবনী লাহিড়ী (ফরিদপুর -কোরকদী গ্রাম):"একদিন দেখলাম ছ-জন বন্দীকে জেলে এনে এক এক করে আইসোলেশন সেলে ঢুকিয়ে দেওয়া হল। যখন নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল লক্ষ্য করলাম, ছ-জনের মধ্যে তিন-চার জনের হাতে মাথায় ব্যান্ডেজ। এঁরা আসতেই সব বন্দীদের মধ্যে বেশ কিছুক্ষণ একটা চাঞ্চল্য দেখা গেল। যুগান্তর পার্টির যাঁরা জেলের ভিতর ছিলেন ,তারা যে ভাবে হাত তুলে ঐ ছ-জনের সাথে কথা বললেন তাতে আমরা বুঝলাম এঁরাও যুগান্তর পার্টির বিপ্লবী। শুনলাম,মাদারিপুর সাব- ডিভিশন থেকে এসেছেন।এঁদের মধ্যে একজন আমাকে প্রচন্ডভাবে আকর্ষণ করলেন।তিনি হলেন মনোরজ্ঞন ভট্টাচার্য।সুন্দর সাস্থ্য!অসাধারণ গানের গলা। সেলের ভিতরে উদাত্ত গলায় তিনি নানা গান গাইতেন,বিশেষ করে রবীন্দ্রনাথের 'একলা চলো রে' গানটির কথা আমার এখনো কানে বাজে।আমরা ওয়ার্ডের জানালার কাছে দাঁড়িয়ে ওঁর গান শুনতাম। বিচার চলতে থাকল।একদিন শুনলাম,রায় বেরোবে।সেদিন ওঁদের সবাইকে কোর্টে নিয়ে গেল।যুগান্তরের নেতারা সারাদিন উদ্বিগ্ন হয়েছিলেন কোর্টের রায় কি হয় জানার জন্য।সন্ধ্যের মুখে শুনলাম,সবাই আবার জেলগেটে ফিরে এসেছেন।শুনলাম তাঁদের মামলায় রায় বার হয়ে গিয়েছে।সবাইকে আবার জেলের ভিতর ফিরিয়ে আনা হল।অবাক হয়ে দেখলাম ,আমরা যে পোষাক পরে আছি-অর্থাৎ,জেলের সাজাপ্রাপ্ত বন্দীদের পোষাক-জাঙ্গিয়া-কুর্তা,এঁদের সবাই তাই পরে আছেন-কিন্তু,শুধু একজনের পায়েই বারফেটার্স্ (ডান্ডাবেড়ি)।তিনি মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য। আমরা জানতাম ,বারফেটার্স্ যাদের পরানো হয় ,রায় বেরোনোর পরে তাদের বিশেষ কোন কারণে আলাদা করে রাখতে হয়-চলাফেরা যতটা সম্ভব বন্ধ করে দেওয়া হয়। কি সাজা হয়েছে ওঁর?ওঁরা ঢোকার পরে ওঁদের বন্ধু যাঁরা ছিলেন তাঁরা চিৎকার করে জিজ্ঞাসা করলেন-"কোর্টের রায় কি হল?" সবাই চুপ। শুধু মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য বললেন-"সবারই সাজা হয়েছে, আমিই শুধু খালাস। বাড়ি যাব।" কেউই ঠিক বুঝতে পারলেন না, আবার জিজ্ঞেস কররেন- "কিহল?" তিনি আবার উত্তর দিলেন-"বললাম তো আমি খালাস। আমি এবার বাড়ি যাবো।তোমরা জেলে পচে মরো।"সবাইকে একে একে সেলে ঢোকানো হল। আর বাঁদিকের সবচেয়ে কোণের যে সেল-যেটাকে বলা হল 'কনডেমড সেল', সেইটাতে ঢোকানো হল মনোরঞ্জন ভট্টাচার্যকে। বুঝলাম তাঁর ফাঁসির হুকুম হয়েছে। কিন্তু সেলে ঢোকানোর পরেই আমরা ওপর থেকে আশ্চর্য হয়ে দেখলাম, মানুষটা সেলের দরজায় মুখ লাগিয়ে রবীন্দ্রনাথের গান গাইছেন-সেই উদাত্ত গলায়। যেন সত্যিই তিনি খালাস। একটা ১৫/১৬ বছরের স্কুল ছাত্রের মনে এই ঘটনার কি রকম প্রতিক্রিয়া হয়েছিল এখন ঠিক আন্দাজ করা যাবে না। কিন্তু মুশকিল ছিল কি-তিনি ছিলেন যুগান্তরের লোক, আর আমরা অনুশীলনের। আমরা যদি তাঁর ব্যাপারে বেশি উৎসাহ দেখাই, তাহলে অনুশীলনের নেতারা অসন্তুষ্ট হবেন। সে জন্য আমরা নিজেদের মধ্যে এ নিয়ে আলোচনা করলেও,প্রকাশ করতাম না-পাছে নেতারা বলেন, এদের আনুগত্য সন্দেহজনক।"অবিভক্ত বাংলার কৃষক আন্দোলনের প্রথম সারির কমিউনিস্ট সংগঠক অবনী লাহিড়ী তাঁর উপরোক্ত পুস্তকে কুড়িগ্রামের কোন প্রসঙ্গ উল্লেখ করেননি, সম্ভবতঃ এই কারনে যে তাঁর দায়িত্ব ছিল দিনাজপুর এবং পাবনা জেলায় কৃষক আন্দোলন সংগঠিত করা। তা সত্বেও এই দীর্ঘ উদ্ধৃতির অবতারণা এই কারণে যে, এটা তৎকালীন কুড়িগ্রামের অনুশীলন ও যুগান্তরের পারস্পরিক সম্পর্ককে বুঝতে সহায়ক হবে। একইসঙ্গে তৎকালীন যুগের মনোরঞ্জন ভট্টাচার্যের মত অনেক অখ্যাত বিপ্লবীর উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করাও আরেকটি কারণ।এই প্রসঙ্গে আরো উল্লেখ্য যে, বিগত শতাব্দীর প্রথমদিকে কুড়িগ্রামে অনুশীলনের প্রাধান্য থাকলেও, তিরিশের দশকের পর থেকে ওখানে যুগান্তর দলই প্রধান শক্তিতে পরিণত হয়।

2 comments:

Unknown said...

This is the first time i entered into this side.I am a student Of Bangldesh College of Textile Technology,Tejgaon-Dhaka.I am final year student.I am from Kurigram.

Unknown said...

Kurigram a jonmo amr,ki kore vuli ar kotha.Kintu ar devlopment nie ami khub frustrated.Amra obosso amader nijeder ai obossothar jonno onekta daye.Asun sobai mile amder Kurigra r jonno kisu korar try kori.
Thaks to all.

Arif,Dhaka
E-mail:arifur.liton@gmail.com